BlogTravel

বগুড়া জেলার ধাপের হাট, অবস্থান ও প্রসিদ্ধ খাবার

বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী হাট হলো ধাপের হাট। নাগর নদের কোল ঘেঁষে সপ্তাহের প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার এই হাট বসে। হাটটি স্থানীয় অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও কৃষির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

অবস্থান

ধাপের হাট বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তরে ধাপ নামক স্থানে অবস্থিত। বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের উত্তর পার্শ্বে নাগর নদের ধারে হাটটির অবস্থান। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার পশ্চিমে এই হাটের অবস্থান। হাটের আয়তন প্রায় ১৩.৫৫ একর। যোগাযোগের জন্য বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক এবং দুপচাঁচিয়া-আক্কেলপুর রাস্তা থেকে সরাসরি রাস্তা রয়েছে, যা হাটুরেদের জন্য সুবিধাজনক।

হাটের বৈশিষ্ট্য

ধাপের হাটের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি পণ্য কেনা-বেচার জন্য আলাদা আলাদা এলাকা বা পট্টি (হাটি) রয়েছে। যেমন:

  • গরু হাটি
  • ধান হাটি
  • মাছ হাটি
  • মাংস হাটি
  • তরকারি হাটি
  • কাপড় হাটি

হাটে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ধান, গম, সরিষা, বিভিন্ন মৌসুমের তরিতরকারি, মসলা, ডাল, শস্য, শাক-সবজি, মিষ্টি, পিঠা, দই, দুধ, ছিন্নী, মুড়ি, মুড়কি, চিড়া, কাঠের তৈরি জিনিস, তালের তীর, কূলা, চালুন, খলসানি, দা, বটি, কোদালসহ বিভিন্ন কৃষি কাজের জিনিস পাওয়া যায়। এছাড়াও মাটির তৈরি জিনিসপত্র, হাঁস-মুরগী, কবুতরের বাচ্চা, কোয়েল পাখি, বিভিন্ন ধরনের মাছ, মাংস, মসলা, শস্যের বীজ ইত্যাদি বিক্রি হয়। গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া বিক্রির জন্যও এই হাট পরিচিত।

প্রসিদ্ধ খাবার

ধাপের হাটের অন্যতম আকর্ষণ হলো এখানকার মাংস-রুটি। হাটে আসা লোকজনের জন্য বিভিন্ন হোটেল রয়েছে, যেখানে এই বিশেষ খাবারটি পরিবেশন করা হয়। মাংস প্রতি বাটি ১২০ টাকা এবং রুটি প্রতি পিস ১৫ টাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া হাটে রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপী, খুরমাসহ হরেক রকমের মিষ্টি পাওয়া যায়। শীতের সময় খেজুর রস ও গুড় কিনতে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে ঘৃতকুমারী সমৃদ্ধ শরবত বিক্রি হয়, যা হাটুরেদের ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব

ধাপের হাটকে কেন্দ্র করে এখানে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, দিন মজুর থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও এই হাট থেকে সুবিধা ভোগ করে থাকেন। প্রতি বছর হাট থেকে কোটি টাকার উপর রাজস্ব আদায় হয়, যা দ্বারা পৌরসভার সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সপ্তাহে দুই দিন হাট করে জীবিকা নির্বাহ করেন। হাটের বাড়তি পণ্য বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী হাট থেকে ক্রয় করে শহরে চালান দেন। মোট কথা, হাটকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটে।

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

ধাপের হাটের ইতিহাস ও ঐতিহ্য দীর্ঘকাল ধরে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। এক সময় এই হাটে ‘ধাপের মেলা’ নামে একটি মেলা বসতো, যেখানে লোকজ সংস্কৃতির সকল কিছুই যেমন- যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ, নাগর দোলা, মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিস, খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যেত। এটি এ অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন বহন করে।

আরও পড়ুনঃ DBBL SWIFT Code, Islami Bank SWIFT Code, All Bank SWIFT Codes in Bangladesh

ধাপের হাট বগুড়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাট, যা স্থানীয় অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। হাটের বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য ও প্রসিদ্ধ খাবার এটির আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছে। এটি এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকা ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button